Search  



                                               

                                           

Md. Mamunur Rashid

Home  |  Bangladesh  |  হাসা-হাসি  |  ইসলাম  |  গল্প  |  

FacebookTwitter


 

Home >> ভালবাসি তাই ভালবেসে যাই
একদিন খুব ভোরে সকালে হাটতে বের হয়ে ছেলেটির দেখা হয় মেয়েটির সাথে। প্রথম দেখাতেই বুকের ভেতর কেমন যেন অনুভব হয় ছেলেটির। মেয়েটি তার পাশ দিয়ে হেটে যায়, ছেলেটি পাশ থেকে তার চুলের ঘ্রাণ নেয় আর অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। পরদিন ঠিক একই সময়, একই স্থানে যেয়ে দাঁড়িয়ে থাকে ছেলেটি। ১০০ থেকে উলটো দিকে গুনতে থাকে। না, সেদিন আরদেখা হলোনা। এরপর দিন আবারো একই স্থানে, একই সময় অপেষ্কা। নিজে নিজে ভাবে। আসবে কি সে? নিজে...কে নিজে জিজ্ঞেস করে। কিসের টানে দাঁড়িয়ে আছি আমি? আমিতো তাকে চিনিনা। আগে কখনো দেখিনি। দু'চোখ বন্ধ করে, হঠাৎ সেই পরিচিত মাথা নষ্ট করা ঘ্রাণে ছেলেটির বোধ ফিরে আসে। চোখ খুলে দেখে, এক মূহুর্ত আগেই মেয়েটি তাকে অতিক্রম করে গেল। না, আজ আর হারানো যাবেনা। পিছু নিল মেয়েটির। কিছু দূরযাবার পর মেয়েটি খেয়াল করে।
খুব ভদ্রভাবেই মেয়েটি জানতে চায় তাকে অনুসরণ করার উদ্দেশ্য। ছেলেটি কিছু বলতে পারেনা, শুধুই ফেল ফেল করে চেয়ে থাকে মেয়েটির চেহারার দিকে। পাগল মনে করে মেয়েটিতার হাঁটার বিরতির ইতি টানে। এবার ছেলেটি পেছন থেকে হাত দিয়ে ছুয়ে দেখে মেয়েটির চুল। কাছে নিয়ে নাকে চেপে ধরে ঘ্রাণ নেয়। মেয়েটিও সেদিন কিছু বলতে পারেনা। এভাবেই তাদের কাছে আসা, ফোনে কথা বলা, ভাল লাগা এবং ভালবাসা।
এক সময় তারা নিজেরা ভাবে, এভাবে আর কতদিন। নিজেরাই সবাইকে জানান দিয়ে বসে বিয়ের পিড়িতে। প্রতিদিন মেয়েটি খুব ভরে উঠে নাশ্তা বানায় তার প্রাণপ্রিয় বরের জন্য। ছেলেটি তার স্ত্রীর হাতের নাশ্তা না খেয়ে বের হলে নাকি সারাদিন কোন কাজে মন বসাতে পারেনা। যেদিন দুপুরে মেয়েটি ফোন করতে ভুলেযায় সেদিন ছেলেটি না খেয়ে থাকে। রাতে এক সাথে এক টেবিলে না খেলে নাকি কারোই ঘুম হয়না। ধীরে ধীরে ছেলেটির ব্যস্ততা বাড়তে থাকে। কত সুন্দর দিলগুলো। আস্তে আস্তে স্মৃতি হতে থাকে। রাতে দেরী করে ঘরে ফেরাটাই যেন এখন স্বাভাবিক। তারপরও মেয়েটি বসে থাকে টেবিলে খাবার সাজিয়ে। ছেলেটি যত রাতেই ফিরে, চেয়ারে বসে অপেক্ষায় থাকে মেয়েটি। এর মাঝে চোখ বুজে আসে। ছেলেটি সামনে এসে দাঁড়ালে, মেয়েটি বলে, "সরি, ঘুমিয়ে পড়েছিলাম"।
এভাবে যতই দিন যেতে থাকে, মেয়েটি যেন তার সবচাইতে বেশি ভালবাসার মানুষটি থেকে দূরে সরতে থাকে। ছেলেটিও তা বুঝতে পারে। কিন্তু তাই বলে ভালবাসার কমতি হয়নি তাদের মাঝে। এক সময় ছেলেটি মেয়েটিকে বলে, তুমি যেহেতু সারাদিন সময় পার করতে পার না, তুমি চাইলে কিছু করতে পার। স্কুলজীবন থেকেই মেয়েটি জড়িত ছিল অভিনয়ে। কিন্তু বিয়ের পর আর তা করাহয়নি। মেয়েটি ভাবে, হাতে যেহেতু সময় আছে, এক আধটু করলে সমস্যা নেই। ছেলেটির সম্মতির কথাজানতে চাইলে সেও না করেনা। আবারও মেয়েটি শুরু করে তার অভিনয়। যতই দিন যায়, মেয়েটির জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকে। সাথে বাড়তে থাকে তারব্যস্ততা। আর্থিক সচ্চলতা অনেক বেশি থাকলেও ধীরে ধীরে তাদের দু'জনেরই দেখা দেয় অভাব। আর এই অভাব হলো সময়ের। মাঝে মাঝে ৩/৪ দিন তো তাদের একে অপরের সাথে দেখা না করেই কাটে।
এমনই একদিন ছেলেটি বাসায় ফিরে খুব তাড়াতাড়ি। এর আগের ৪ দিন তার সাথে দেখা হয়নিমেয়েটির। একজন ঘুমানোর পরে আরেকজন ঘরে ফেরে,আবার অন্যজন ঘুম থেকে উঠার আগেই বের হয়ে যায়অপরজন। ছেলেটি ভাবে, অনেকদিন একসাথে বসে চা খাওয়া হয়না। ফোন করে মেয়েটির মোবাইলে। জানতে পারে আধ ঘন্টার মধ্যেই ফিরবে মেয়েটি।চুলায় চা বসিয়ে দিয়ে টিভি দেখতে শুরু করে। মোটামুটি সবকটি চ্যানেলেই তার স্ত্রীর জনপ্রিয়তা। ভাললাগে তার। অপেক্ষা করছে মেয়েটির জন্য। চা বানিয়ে নিয়ে টেবিলে সাজিয়ে বসে, এই বুঝে এসে পড়লো। এভাবে চলে যায়প্রায় ৪টি ঘন্টা। নিজে নিজে চেয়ার বদলিয়ে অভিনয় করে। নিজে নিজে কথা বলে, যেন সামনে বসেআছে মেয়েটি। অবশেষে রাতে খাবার টেবিলে খাবার নিয়ে অপেক্ষা করে মেয়েটির জন্য। অপেক্ষা করতে করতে এক সময় টেবিলে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়ে ছেলেটি। মেয়েটি বাসায় ফিরে টেবিলের পাশে এসে দাঁড়ালে ছেলেটি বলে, "সরি, ঘুমিয়ে পড়েছিলাম"।
লিখেছেন: " মিশু "
 
+ Submit Feedback